বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মী বন্টন: অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিশ্লেষণ

আজকে একটা বিষয় নিয়ে আমি একটি লেখা লেখি করার চেষ্টা করব যেটা হচ্ছে, যে বাংলাদেশের একটা ইন্ডাস্ট্রিতে কতজন লোক সাধারণত প্রয়োজন হয় সেটা আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে।  সেটা না হলে আমরা বুঝতে পারবো না যে আমাদের সাথে কত জনশক্তি প্রয়োজন হবে। সামনে যেটা হবে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে হয়তো আমরা ঠিকমতো দিতে পারব না অথবা প্রয়োজনীয়তার বেশী তৈরী করা হবে। 

এর জন্য আমাদের বুঝতে হবে যে, আমাদের ব্যাপার ইন্ডাস্ট্রি কি কি লোকজন নেয় বা তাদের প্রয়োজন কতটুকু, সেটা নিয়ে একটা আইডিয়া নিতে হবে। সঙ্গে যেটা নিতে হবে সেটা হচ্ছে যে আমাদের এই টোটাল লেবার মার্কেট সিস্টেমটা সেটাতে আসলে আমাদের লোকজন কোথায় যাচ্ছে বা কি করছে বর্তমানে? 

আমি যে তথ্যগুলো দিচ্ছি সেটা হচ্ছে একটা ওভারঅল গবেষনা কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু একেক ইন্ডাস্ট্রি একেক রকম তবুও কাছাকাছি তথ্য হবে, খুব বেশি ডিফারেন্স হবে না। 

একটা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বেশ কিছু ধরনের লোক প্রয়োজন হয় যেখানে আমি এভাবে ভাগ করেছি প্রথমে শুরু হবে,  অদক্ষ শ্রমিক আধা দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ শ্রমিক,  কারিগরি ও তত্ত্বাবধায়ক কর্মী যাকে আমরা সুপারভাইজার লেভেল করি আর সর্বশেষ হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট।  

বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মী বন্টন: অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিশ্লেষণ

 

আমার গবেষণামতে যে বাংলাদেশের একটা ইন্ডাস্ট্রিতে অদক্ষ শ্রমিকের সরাসরি প্রয়োজন হয় ২০ শতাংশ, আধা দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ৩০ শতাংশ, দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ৩৫ শতাংশ, কারিগরি এবং তত্ত্বাবধায়ক কর্মী প্রয়োজন হয় ১০% এবং ম্যানেজমেন্ট এবং প্রফেশনাল হয় ৫% । 

একজন অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে তখন আমরা এটা জানবো যে এদের কোন অভিজ্ঞতা প্রয়োজন নেই। এখন সেই ক্ষেত্রে আমাদের যে জাতীয় দক্ষতা সার্টিফিকেটের ব্যাপারটা আছে সেটাও আমরা নিতে পারি অথবা এদের থেকে কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনের আমাদের প্রয়োজন হয় না।  অদক্ষ কর্মী সাধারণত হেল্পার হিসেবে কাজ করে।  তাদেরকে একটি পূর্ণ কাজ করতে দেওয়া হয় না। তাই তাদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন নেই।  সার্টিফিকেট থাকলে তাহলে অবশ্যই এটা আলাদাভাবে চাকুরী পেতে এবং কাজ কতে সহায়তা কবে। অসুবিধা হচ্ছে বেসিক লেভেল যারা কাজ করে তাদের কোন শিক্ষাগত অবস্থায় থাকে না । তাই তারা সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেনা কার এটার জন্য  ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন হয়। 

কোন প্রতিষ্ঠানে বা যে কোন ইন্ডাস্ট্রি অর্ধ দক্ষ শ্রমিকের বেশি চায়  কারণ তারা একদমই শূন্য দক্ষ বা একদম বেসিক লেভেলের লোকজনকে নিতে চায় না।  কারন তারা আসলে অনেক ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারনে অর্ধ দক্ষ শ্রমিকের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রয়োজন হয় একটি ইন্ডাস্ট্রিতে।  আমি এই অর্ধ দক্ষ অংশটাকে অংশটাকে ভাগ করেছি দুই ভাগে। প্রথম ভাগে শূন্য থেকে দুই বছরের অভিজ্ঞতা এবং দ্বীতিয় ভাগে দুই বছরে উপরে যাদের অভিজ্ঞতা আছে । 

যাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই তাদের থেকে দুই বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়।  সাধারণত  এসএসসি সার্টিফিকেট, এইচ এস সি সার্টিফিকেট বা অনেক ক্ষেত্রে ডিগ্রি সার্টিফিকেট এই কাজ করে এখানে। এই অংশের জন্য জাতীয় দক্ষতা সার্টিফিকেট এর প্রাধান্য দেয়া উচিতি ইন্ডাস্ট্রিকে ।  মেশিন অপারেটর,  লাইন কর্মী এইসব পজিশনে কাজ করে এরা। 

আর এরই মধ্যে যাদের দুই বছরের অভিজ্ঞতা হয়, তারা আসলে এদের সিনিয়র পজিশনটা পায় যেমন সিনিয়র মেশিন অপারেটর না সিনিয়র লাইন কর্মী । এগুলো আসে এখানে বেতনটাও বেশি হয় । অনেক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষনের বেশ সুবিধা পায় এরা।  

এবার আসি দক্ষ জনশক্তিদের কাছে । এদের ন্যূনতম ১ থেকে ৫ বছর বা এর চেয়ে বেশী বছরে বেশি অভিজ্ঞতা থাখক। এখানে নূন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থা যেটা রাখে হয়েছে তা হলো মাধ্যমিক স্কুল এসএসসি পাশ , এইচএসসি, ডিগ্রী পাস। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যেমন সার্টিফিকেট দ্বারা কাজের মাধ্যমে এরা তাদের দক্ষতা গুলো পায় । এখানেও দুইটা ভাগ আছে।  যারা এক থেকে পাঁচ বছরে অভিজ্ঞতা, তাদেরকে প্রায় ২০ শতাংশ প্রয়োজন হয় ইন্ডাস্ট্রিতে আর যারা পাঁচ বছরের উপরে কাজ করে তাদের ১৫% বেশি  বেশি প্রয়োজন হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। 

এখন পর্যন্ত যাদের কথা বলছি না তারা হচ্ছে ভোকেশনাল এডুকেশন থেকে এসএসসি এইচএসসি পাস করা তারা , এখন যাদের কথা বলছি তারা হল কারিগরি ও তত্বাবধায়ক পদ , যাদের শূন্য থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতা দেখে দেখিতে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ দেওয়া হয়।  এদের যেটা প্রয়োজন হয় সেটা হচ্ছে প্রকৌশল বা প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা।  স্নাতক ডিগ্রী সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না । এদের ইন্ডস্ট্রিতে প্রয়োজন হয় ৫% ।

সর্বশেষ আছে ম্যানেজমেন্ট এবং প্রফেশনালরা। এদের যাদের ১ থেকে ৫ বছর ১০ বছরের বেশি তারা তাদেরকে নেওয়া হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এখানে যেটা প্রয়োজন নুন্যতম স্নাতক ডিগ্রি বা উচ্চ পদবির ক্ষেত্রে মাস্টার ডিগ্রী থাকাটা মাস্টার ডিগ্রী । সাধারনত এদের ফ্যাক্টরি ম্যানেজার অথবা চালানোর জন্য নেতৃত্ব দান করার জন্য দেওয়া রাখা হয়। 

এই লেখাটা লেখার পিছনে আমার যেই চিন্তাভাবনার একটা কাজ করেছে সেটা হচ্ছে যে আমাদের বোঝা উচিত যে আমাদের কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কোন পজিশনে জনশিক্তি ,  কি ধরনের কত শতাংশ লোক নেওয়া হবে, তাদের অভিজ্ঞতা কি চায়, আমরা সেই অনুযায়ী আমাদের যে কর্মীগুলোকে তৈরি করছি কিনা ? কম করছি না কি বেশী করছি? 

একটা জিনিস নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে যে এখানে কনটেকচুয়ালাইজেশন বা লোকালাইজেশনে একটা বড় ব্যাপার আছে এরকম যে আপনি রাজশাহীতে আছেন এবং রাজশাহীতে ইন্ডাস্ট্রিতে আছে আমাদের কত লোকের প্রয়োজন হবে এবং সেই প্রয়োজন অনুযায়ী কোনটা কোন ভাগে যাবে, সেটা বের করা বেশী প্রয়োজনীয়। 

ধরুন, রাজশাহীতে একটা ফ্যাক্টরিতে আমাদের 35% অর্ধদক্ষ লোক লাগবে। আমরা সব ইন্ডাস্ট্রি থেকে যখন তথ্যগুলা যোগার করে দেখলাম যে,  আমাদের ৫ লক্ষ লোক লাগবে আমরা যেটা করবো যে আমরা ওই শতাংশ অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে এবং সেই অনুয়াী আমাদেরকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুলকে  ভাগ করে নিতে হবে, যেন প্রয়োজনের বেশী  বা কম লোক যেন প্রশিক্ষিত না হয় । 

একটা ব্যাপার  মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের দেশ থেকে একটা ভালো সংখ্যক লোক বিদেশে যায় । যদিও সত্য বেশীর ভাগই অদক্ষ হিসেবেই যায় । কিন্তু আমরা ভাল করে দেখি তাহলে তাদের কাছে অর্থ দক্ষ এবং দক্ষ লোকের চাহিদা বেশী । তাই আমরা যখন প্রশিক্ষণ শুরু করবো,  আমাদেরকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে এদের মধ্যে কারা কারা বিদেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহী, তাদেরকে আমাদের অবশ্যই ক্যারিয়ার কাউন্সিল করে বলতে হবে যে আপনারা এই কাজগুলো করতে হবে। সেক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে আপনাদেরকে বিদেশে যেতে হবে বিদেশে যাবার জন্য এটা প্রয়োজনীয়।  

আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে বাংলাদেশে একসময় দক্ষ লোকের প্রয়োজন কমে যাবে কিন্তু বিদেশের জন্য সেটা বাড়বে। আমাদেরকে এটাই মাথায় রেখেই চলতে হবে, টিভেটের একটা বড় অংশ কিন্তু বাহিরে দেশে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে আমাদের । কারণ আমাদের দেশে সে পরিমাণ ইন্ডাস্ট্রি থাকার প্রয়োজন ছিল তাদের জন্য.  সেই পরিমান ইন্ডাস্ট্রি নেই । তাই এদেরকে আমরা চাকরি দিতে পারবো না ভবিষ্যতে । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top